লেখক: লাবিব ভূঁইয়া লব্ধ
বুদ্ধি ও বুদ্ধিমত্তা কী?
প্রাণিকূলের মধ্যে মানুষ প্রাকৃতিকভাবেই সবচেয়ে বুদ্ধিমান। একই সঙ্গে স্বাধীন চিন্তার অধিকারী। ‘বুদ্ধি’ হচ্ছে বোধ, বিচারশক্তি বা বিবেক। অর্থাৎ মনের যে বৃত্তির মাধ্যমে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়, তাকেই ‘বুদ্ধি’ বলা হয়ে থাকে।
আবার শুধু বুদ্ধি থাকলেই হয় না, তার স্বাভাবিক ও পরিপূর্ণ বিকাশ থাকতে হয়। সেটি অবশ্য অন্য এবং বিশদ আলোচনার বিষয় (যা এই প্রবন্ধের জন্য উপযুক্ত নয়)।
আর ‘বুদ্ধিমত্তা’ হচ্ছে বুদ্ধিযুক্ত, বুদ্ধিশালিতা, মনীষা বা অতীব ধীশক্তি সম্পন্ন হওয়া। একজন বুদ্ধিমান ও বিকাশসমৃদ্ধ মানুষ প্রাথমিক ও উচ্চ শিক্ষাগ্রহণ করে এবং উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যেকোন কাজ করতে পারে। আবার একজন নিরক্ষর মানুষের শারীরিক পরিশ্রমনির্ভর কাজের জন্য প্রশিক্ষণের দরকার হয় না। কিন্তু প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেও বিশেষ বিশেষ কাজ করতে সক্ষম।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা :
প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন অ্যাপ্লিকেশন বা সফটওয়্যার তৈরি করে, বিশেষ ব্যবস্থাপনায় তা যন্ত্রে স্থাপন করা হয়। যে যন্ত্রের “বুদ্ধিমত্তা” থাকে সেটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা”।
অন্য কথায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হচ্ছে- যে যন্ত্র মানুষের মতো কাজ করতে পারে। আমরা যাকে “রোবট” বলে অভিহিত করে থাকি।
এজন্য যন্ত্রকে বুদ্ধিমত্তার উপযুক্ত করে তৈরি করা হয়। যন্ত্রকে দিয়ে তখন মানুষ যেসব সহজ ও জটিল কাজ করতে পারে, সেসব কাজের এক বা একাধিক কাজ সুনির্দিষ্টভাবে করানো যায়।
“কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা”র জন্য এসব অ্যাপ্লিকেশন বা সফটওয়্যার কীভাবে তৈরি করা হয়, তা সুদীর্ঘ আলোচনা। মানব মস্তিষ্কের মতো বিষয়টি অনেক জটিল। আরেকটি প্রবন্ধে সেসব নিয়ে লিখবো।
মেশিন লার্নিং :
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্য যেসব অ্যাপ্লিকেশন বা সফটওয়্যার তৈরি করা হয়, সেসব অ্যাপ্লিকেশনকেই “মেশিন লার্নিং” বলা হয়ে থাকে। যাকে আমরা যন্ত্রের জন্য উপযুক্ত শিক্ষা গ্রহণমূলক (যান্ত্রিক শিক্ষাগ্রহণ) সফটওয়্যার বলতে পারি।
সংক্ষেপে আরও কিছু কথা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার :
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা স্বাধীন চিন্তার অধিকারী নয়। তবে এসব নিয়ে গবেষণা চলছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা রোবট, সাধারণত সুনির্দিষ্ট কাজের উপযুক্ত করে তৈরি করা হয়।
মানুষ একই ধরনের কাজ একনাগাড়ে করে ক্লান্ত হয়। মানুষ কাজে ফাঁকি দেয়, আবার দিনের শুরু এবং শেষ দিকের উৎপাদন একই হারে হয় না। বর্তমানে অনেক দেশেই রোবট দিয়ে এ ধরনের কাজ করানো হয়, এর ফলে উৎপাদন বেশি হচ্ছে।
জটিল ও সূক্ষ্ম অস্ত্রোপচারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা হয়।
অতিরিক্ত ভারবহনের কাজ যেমন- সমুদ্র বন্দর, বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানে পণ্য ওঠানো নামানোর কাজে ব্যবহার করা হয়।
বিশাল আকারের জরিপ, পরিসংখ্যান বা হিসাব-নিকাশে নির্ভুল কাজের জন্যও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগানো হচ্ছে।
পরিশেষে ছোট্ট একটি বাস্তব উদাহরণ :
রাজধানীর আসাদগেট এলাকায় ফ্যামিলি ওয়ার্ল্ড কনভেনশন সেন্টারের দ্বিতীয় তলায় চালু হয়েছে “রোবট রেস্টুরেন্ট” (সূত্র: প্রথম আলো, ১৭ নভেম্বর ২০১৭, পৃষ্ঠা-১৬)। যেখানে “ইয়োইদং” নামে নারী ও পুরুষের আদলে তৈরি দুটি রোবট, অতিথিদের টেবিলে শুধু খাবার পরিবেশন করে, অর্ডার নেয় না। রোবট আপনার টেবিলের সামনে এসে বলবে, “ওয়েলকাম স্যার, টেক ইয়োর ফুড”।
রোবটের মেমোরিতে রেস্তোরাঁর প্রতিটি টেবিলের নম্বর দেয়া আছে। একসঙ্গে একাধিক টেবিলেও খাবার পরিবেশন করতে পারে। কোনো গ্রাহক তার অর্ডারের খাবারের পরিমাণের চেয়ে কম বা বেশি খাবার নিলে, রোবটটি সংকেত দেয়। রোবটগুলোর চলার পথে কেউ দাঁড়ালে বা চলার পথে বাধাপ্রাপ্ত হলে, রোবট হাঁটা থামিয়ে দেয় এবং সরে যাওয়ার জন্য শব্দ করে।
রোবট দুটি তৈরি করেছে চীনের রোবট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান “এইচজেডএক্স টেকনোলজি”।
===================